logo
ads

বেলজিয়ামের ভিসা পেতে যেতে হবে দিল্লি! ভারতীয় ভিসা আপডেট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ পি.এম
বেলজিয়ামের ভিসা পেতে যেতে হবে দিল্লি! ভারতীয় ভিসা আপডেট

সংগৃহীত

বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ইউরোপীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় নতুন জটিলতা দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির বেলজিয়াম দূতাবাস একটি অফিসিয়াল বার্তায় জানিয়েছে যে, এখন থেকে ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস বেলজিয়ামের ভিসা আবেদন আর গ্রহণ করবে না। ফলে, বাংলাদেশী পর্যটক, শিক্ষার্থী বা কর্মীরা বেলজিয়ামের ভিসা পেতে দিল্লির VFS গ্লোবাল সেন্টারে যেতে বাধ্য হবেন। এই অস্থায়ী ব্যবস্থা আগামী এক মাসের জন্য কার্যকর, যদিও দিল্লির বেলজিয়াম দূতাবাস দ্রুত ঢাকায় VFS-এর মাধ্যমে আবেদন গ্রহণের চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে।এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে, বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের ভিসা নীতির কঠোরতার কারণে। ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলো (IVAC) মেডিকেল ভিসা ছাড়া অন্যান্য ভিসা প্রায় বন্ধ রেখেছে, যা ডাবল এন্ট্রি ভিসা (দিল্লি যাওয়ার জন্য আবশ্যক) পাওয়াকে কঠিন করে তুলেছে। ফলে, ইউরোপীয় দেশগুলোর ভিসা আবেদন করতে ভারতে যাওয়া এখন একটি জটিল এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেলজিয়াম ভিসা প্রক্রিয়ায় নতুন পরিবর্তন: ঢাকা থেকে দিল্লির দিকে স্থানান্তর
বাংলাদেশে বেলজিয়ামের কোনো দূতাবাস নেই। আগে ঢাকার সুইডিশ দূতাবাস বেলজিয়ামের শর্ট-স্টে (C-ভিসা, ৯০ দিন পর্যন্ত) আবেদন গ্রহণ করত, যা পর্যটন, ব্যবসা বা শর্ট-টার্ম শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন থেকে সেই সুবিধা বন্ধ। দিল্লির বেলজিয়াম দূতাবাসের বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশী আবেদনকারীদের দিল্লির VFS গ্লোবালে অনলাইন আবেদন করতে হবে, তারপর অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট বুক করে সশরীরে নয়া দিল্লির VFS অফিসে ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। লং-স্টে (D-ভিসা, যেমন কর্ম বা দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা) আবেদনও শুধুমাত্র নয়া দিল্লির VFS-এ জমা দিতে হবে, এবং পাসপোর্ট সেখানেই ফেরত দেওয়া হবে।
এই ব্যবস্থা অস্থায়ী, কিন্তু এক মাসের মধ্যে ঢাকায় পুনরায় চালুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে দূতাবাস জানিয়েছে। তবে, বেলজিয়ামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপের বাসিন্দাদের D-ভিসা আবেদন ইতিমধ্যেই নয়া দিল্লিতে জমা দিতে হয়, যা এই পরিবর্তনকে আরও জটিল করে তুলেছে। VFS গ্লোবালের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং এবং বায়োমেট্রিক্স (ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি) নয়া দিল্লিতে করতে হবে, যা প্রসেসিং টাইম ১৫ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত লম্বা করতে পারে।

ভারতীয় ভিসা জটিলতার সাথে মিলে বাংলাদেশী কর্মী-শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব
এই পরিবর্তন ভারতীয় ভিসা নীতির সাথে মিলে বাংলাদেশীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত IVAC সেন্টারগুলোতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সীমিত করে দিয়েছে, যা মেডিকেল ভিসা ছাড়া ট্যুরিস্ট, বিজনেস বা ডাবল এন্ট্রি ভিসা (দিল্লি যাওয়ার জন্য দরকার) পাওয়াকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। ফলে, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশের ভিসা আবেদন করতে দিল্লি যাওয়ার পথটি বন্ধ হয়ে গেছে, যা কর্মী, শিক্ষার্থী এবং পর্যটকদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
পূর্ববর্তী আলোচনা অনুসারে, এই জটিলতা বাংলাদেশী কর্মীদের ইউরোপে মাইগ্রেশন ৫২% কমিয়েছে, যা রেমিট্যান্সে €১.২ বিলিয়নের ক্ষতি করেছে। বেলজিয়ামের ক্ষেত্রে, যেখানে কনস্ট্রাকশন, হেলথকেয়ার এবং আইটি সেক্টরে বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে, এই পরিবর্তন চাকরির সুযোগ হ্রাস করবে। শিক্ষার্থীরাও প্রভাবিত, কারণ বেলজিয়ামের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাডমিশনের জন্য ভিসা প্রসেসিং বিলম্বিত হবে। অর্থনৈতিকভাবে, এটি বাংলাদেশের GDP-এর ৬% রেমিট্যান্স-নির্ভর অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করছে।

নিচে একটি টেবিলে এই পরিবর্তনের প্রভাবের সারাংশ দেওয়া হলো:

প্রভাবের ধরন

বিস্তারিত বর্ণনা

সম্ভাব্য ফলাফল (বাংলাদেশীদের জন্য)

কর্মীদের মাইগ্রেশন

দিল্লি যাওয়ার জন্য ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসা পাওয়া কঠিন; অ্যাপয়েন্টমেন্ট সীমিত।

৫২% মাইগ্রেশন হ্রাস; বেলজিয়ামে চাকরির সুযোগ মিস; অল্টারনেটিভ রুট (থাইল্যান্ড) খরচ - গুণ বাড়বে।

শিক্ষার্থীদের উপর

D-ভিসা আবেদন নয়া দিল্লিতে; প্রসেসিং বিলম্ব।

অ্যাডমিশন মিস; বেলজিয়ামের ইউনিভার্সিটিতে স্কিলড ওয়ার্কারের চাহিদা পূরণ হবে না।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

ভিসা ফি, ট্রাভেল খরচ বাড়ছে; রেমিট্যান্স কম।

. বিলিয়ন ক্ষতি; পরিবারের ঋণ বোঝা বাড়বে; অনিয়মিত মাইগ্রেশনের ঝুঁকি।

মানসিক চাপ

ভিসা রিজেকশন রেট বাড়ছে (২৫-৪০%); অস্থিরতা।

হতাশা, সুইসাইডের ঝুঁকি; পর্যটক/ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি।

ঘুষ এবং দুর্নীতির অভিযোগ: গভীর অনুসন্ধানের ফলাফল
পূর্ববর্তী আলোচনায় উল্লেখিত ঘুষের অভিযোগগুলো এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং রিপোর্টে (যেমন X পোস্ট) দেখা যায় যে, ভারতীয় ভিসা পেতে এজেন্টরা ১-১.৮ লাখ টাকা ঘুষ চার্জ করে, কিন্তু রিজেকশনে ফেরত দেয় না। VFS গ্লোবাল প্রক্রিয়ায়ও এজেন্ট-সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যদিও সরকারি তদন্তের অভাব রয়েছে। ভারতের CBI-এর পুরনো কেসে (২০১৭-২০২৫) পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের ঘটনা ধরা পড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে স্পেসিফিক প্রমাণ সীমিত। এই অভিযোগগুলো 'প্রতারণামূলক' বলে মনে হয়, কারণ সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট সত্ত্বেও লাইন লম্বা হচ্ছে কিন্তু ভিসা মিলছে না।
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এটি ভারতের নিরাপত্তা-ভিত্তিক নীতি (অবৈধ অভিবাসন রোধ), কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (ইউনুস প্রশাসন) বলছে এটি অযৌক্তিক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইইউ-এর ভিসা কোড সাসপেনশন (২০২১ থেকে) এবং ক্রোয়েশিয়ার মতো দেশের ওয়ার্ক পারমিট সাসপেনশনও এই সমস্যাকে আরও গভীর করেছে।

সাম্প্রতিক পরিবর্তন এবং ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ইইউ-বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডায়ালগে ঢাকায় ভিসা সেন্টার খোলার আলোচনা চলছে, কিন্তু অগ্রগতি কম। ভারতীয় IVAC-এ অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট বাড়ানোর চেষ্টা হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিলম্ব চলছে। বেলজিয়ামের এই পরিবর্তন ২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি থেকে D-ভিসার জন্য দিল্লি-কেন্দ্রিক ছিল, কিন্তু C-ভিসার জন্য এখন সম্পূর্ণ স্থানান্তর ঘটেছে।

পরামর্শ: কী করবেন বাংলাদেশীরা?
অফিসিয়াল চ্যানেল ব্যবহার করুন: VFS গ্লোবালের ওয়েবসাইট (visa.vfsglobal.com/bgd/en/bel) থেকে অনলাইন আবেদন করুন এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন। ডকুমেন্টস: পাসপোর্ট, ছবি, ইনভিটেশন লেটার, ফিনান্সিয়াল প্রুফ।
ভারতীয় ভিসা: IVAC (indianvisa-bangladesh.nic.in) চেক করুন জরুরি কেসের জন্য। এজেন্ট এড়ান, ঘুষের ফাঁদে পড়বেন না।
সহায়তা: BMET বা বিদেশ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন। স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে অল্টারনেটিভ দেশ (যেমন জার্মানি, যার এম্বাসি দিল্লিতে) বিবেচনা করুন।
সতর্কতা: অনিয়মিত মাইগ্রেশন এড়ান; ইইউ-এর ETIAS (২০২৬ থেকে) আরও কঠোরতা আনবে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারত-ইইউ সম্পর্কে টেনশন বাড়াচ্ছে, কিন্তু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। সর্বশেষ আপডেটের জন্য অফিসিয়াল সাইট চেক করুন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ